প্রকাশিত: ২৫/০২/২০১৭ ১০:৪০ এএম

নিউজ ডেস্ক::
পিলখানায় নারকীয় হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আপিল ও ডেথরেফান্সের শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আসামির সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম এই হত্যা মামলাটি হাইকোর্টে এ বছরেই নিষ্পত্তির আশা করেছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আশা করি এ বছরের মধ্যেই মামলাটি নিষ্পত্তি হবে। মামলাটিতে অনেক আসামি থাকায় তাড়াহুড়ো করার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, একই সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে একজন আসামির মৃত্যুদণ্ড আবার অপর একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে বলে আসামিপক্ষ থেকে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। এতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু আইনগত বিষয় উঠে এসেছে। এ কারণেই এসব বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন। আদালত সময় মঞ্জুর করেছেন।

তবে একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে। গত আট বছরেও এই মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। কবে বিচার কার্যক্রম শেষ হবে তা নিদিষ্ট করে বলতে পারছে না আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলার ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এ ছাড়া মামলার বিচার কার্যক্রম মুলতবি করা হচ্ছে দীর্ঘ সময় দিয়ে। ফলে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চাই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি। দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে হত্যা মামলায় যেসব আসামি খালাস পেয়েছিল তারা এই মামলার আসামি হওয়ার কারণে কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। দ্রুত নিষ্পত্তি হলে আসামি, নিহতদের স্বজন ও দেশবাসী দ্রুত বিচার পাবে বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে মামলা দুটি স্থানান্তর হয় নিউমার্কেট থানায়। হত্যা মামলায় মোট আসামি ছিল ৮৫০ জন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৫২ বিডিআর জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। আর খালাস পান ২৭৮ জন।

পরে মৃত্যুদণ্ডের এই রায় কার্যকরের জন্য তা ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ ছাড়া নিম্ন আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জন জওয়ানের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। এরই মধ্যে ৩৫৯ কার্যদিবসব্যাপী আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক পাঠ করা হয়েছে ১২৪ কার্যদিবস। বাকি ২৩৫ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। ২৮ ফেব্রয়ারির মধ্যে হাইকোর্ট উভয় পক্ষকে সকল আইনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার নির্দেশ দেন।

কিন্তু গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ সময় আবেদন জানালে আদালত ২ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

অপরদিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি। এই মামলায় আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে একজন বেসামরিক নাগরিক, বাকি আসামিরা বিডিআরের জওয়ান।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর পেরিয়ে গেছে আট বছর। এর মধ্যে আদালতে দাখিল করা হয়েছে মামলার অভিযোগপত্র। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ হয়নি মামলার বিচার কার্যক্রম।

আইনজীবী সূত্র জানিয়েছে, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রায় ১ হাজার ২০০ সাক্ষী রয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৫ মার্চ পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

পাঠকের মতামত

‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার রাজি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণ খুঁজতে হবে’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ...